প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কি বিচার হবে? তার কি ফাঁসি হতে পারে?

 বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন– সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কি বিচার হবে? তার কি ফাঁসি হতে পারে? ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এই প্রশ্নটি এখন দেশের প্রতিটি মানুষের মনে। আইন বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে সব গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড বা ফাঁসি হতে পারে। কিন্তু ঠিক কী কী কারণে তার এই ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে? চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রধান কারণগুলো।



প্রথম এবং সবচেয়ে বড় কারণটি হলো ‘জুলাই গণহত্যা’। ২০২৪ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে সরকার যে ভয়াবহ বলপ্রয়োগ করেছিল, তার দায়ভার সরাসরি তৎকালীন সরকার প্রধানের ওপর বর্তায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন টিমের মতে, এই হত্যাযজ্ঞ ছিল একটি ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’ বা ‘Crimes Against Humanity’। নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে শত শত মানুষকে হত্যার অভিযোগটিই তার ফাঁসি হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় আইনি ভিত্তি।


দ্বিতীয় কারণটি হলো ‘কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ বা নেতৃত্বের দায়। আন্তর্জাতিক আইন এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কোনো বাহিনীর প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যদি কেউ গণহত্যার নির্দেশ দেন অথবা গণহত্যা বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তবে তাকে মূল অপরাধীর সমান বা তার চেয়েও বেশি দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রসিকিউশন দাবি করেছে, শেখ হাসিনা শুধু নির্দেশই দেননি বরং তিনি এই হত্যাযজ্ঞের মূল পরিকল্পনাকারী বা ‘মাস্টারমাইন্ড’। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে তার সর্বোচ্চ সাজার বিধান রয়েছে।


তৃতীয় কারণটি হলো ‘গুম এবং আয়নাঘর’। শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষকে গুম করা হয়েছে। ‘আয়নাঘর’ নামের গোপন বন্দিশালায় বছরের পর বছর মানুষকে আটকে রাখা এবং নির্যাতনের যে লোমহর্ষক তথ্য এখন সামনে আসছে, তা মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধ। এই গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনার দায়ভার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপানো হচ্ছে, যা তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়কে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।


চতুর্থত, বিডিআর বিদ্রোহ বা পিলখানা হত্যাকাণ্ড। যদিও এটি অনেক আগের ঘটনা, কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় এই মামলার পুনঃতদন্তের দাবি উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ সালে পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার ঘটনার পেছনে তৎকালীন সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। যদি নতুন তদন্তে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়, তবে এটিও তার ফাঁসির অন্যতম কারণ হতে পারে।


সবশেষে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন এবং নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার যে সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছিল, তাকে ‘স্টেট স্পন্সরড ক্রাইম’ বা রাষ্ট্রীয় মদদে অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।


আইনজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ হত্যা মামলা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গণহত্যা মামলা– এই দুই প্রক্রিয়াতেই শেখ হাসিনার বিচার এগিয়ে চলছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং দালিলিক নথিপত্র যদি আদালতে তার অপরাধ নিশ্চিত করে, তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ ফাঁসি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, আইনি প্রক্রিয়ায় এই বিচার কত দ্রুত সম্পন্ন হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ